ঢাকায় ৯৭% জারের পানিতে মলের ব্যাকটেরিয়া!

ঢাকার জারের পানি ছবি

শাক-সবজিতে কীটনাশক দূষণ, বোতলজাত ও জার পানিতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানের মাত্রা ও গুণাগুণ নির্ণয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমন ‘ভীতিকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কাউন্সিলের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম।

জার পানির গবেষণায় ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা; বিশেষ করে ঢাকার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, চকবাজার, সদরঘাট, কেরানিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, আশুলিয়া ও সাভার এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, সংগ্রহ করা নমুনাগুলোতে টোটাল কলিফর্মের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে যথাক্রমে ১৭ ও ১৬০০ এমপিএন (মোস্ট প্রবাবল নম্বর) এবং ফিকাল কলিফর্মের ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১১ ও ২৪০ এমপিএন।

এলিফ্যান্ট রোড, চকবাজার, বাসাবো, গুলশান, বনানী থেকে পানির নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় টোটাল কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

সদরঘাট এলাকার নমুনা সবচেয়ে দূষণযুক্ত নির্দেশ করে; যেখানে সর্বোচ্চ টোটাল কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৬০০ ও ২৪০ এমপিএন ।

টোটাল কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম পরিমাণ পানির সম্ভাব্য দূষণের পরিমাণ নির্দেশ করে। টোটাল কলিফর্ম পরিমাপে পানিতে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্রে উপস্থিত অনুজীব ও মলমূত্র দ্বারা দূষণের সম্মিলিত মান পাওয়া যায়।

আর ফিকাল কলিফর্ম পরিমাপের মাধ্যমে শুধু মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর অন্ত্র ও মলমূত্রের দ্বারা দূষণের মাত্রা নির্দেশিত হয়।
গবেষকদলের প্রধান মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টোটাল কলিফর্ম কাউন্টের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না পানিতে উপস্থিত অনুজীব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কি না? সেজন্য পানিতে কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেলে ফিকাল কলিফর্ম কাউন্ট করা অত্যাবশ্যক।

“পানিতে টোটাল কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের পরিমাণ শূন্য থাকার কথা থাকলেও ৯৭ ভাগ জার পানিতে দু’টোর উপস্থিতি রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”

স্বাস্থ্য ঝুঁকি

মনিরুল ইসলাম বলেন, কলিফর্ম মূলতঃ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও প্রোটোজোয়া মতো প্যাথোজেন সৃষ্টিতে উৎসাহ যোগায় বা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে ই-কোলাই (কলিফর্ম গোত্রের অণুজীব) মানবদেহে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, মাথা ব্যথা, বমিভাব, পেট ব্যথা, জ্বর-ঠাণ্ডা, বমির মতো নানা উপসর্গ সৃষ্টির পাশাপাশি ক্রমাগত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ষাটোর্ধ্ব মানুষের হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই রোগের কারণে ক্রমান্বয়ে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি কোনো কোনো পরিস্থিতিতে ব্লাড ট্রান্সফিউশন অথবা কিডনি ডায়ালাইসিস করার মত অবস্থা দাঁড়ায়।”

এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে সাধারণত রোগের উপসর্গ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রতীয়মান হয় আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাত থেকে আট দিনও লেগে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কর্তৃক মান নির্ধারণ করা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অবাধে চলছে দূষিত পানির ব্যবসা।

মনিরুল বলেন, “স্যুয়ারেজ লাইনে ছিদ্রসহ বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানিতে মলমূত্রের জীবাণু মিশে যায়। আর সেগুলো কিছুটা শোধন করে বা শোধন ছাড়াই জারের পানিতে বিক্রি করা হচ্ছে। সে কারণে জীবাণু থেকেই যাচ্ছে।”

ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম থাকেই জানিয়ে তিনি বলেন, “কেবল ফুটিয়ে খেলে সেই জীবাণু মুক্ত হতে পারে।”

মান ঠিক নেই বোতলজাত পানিরও

কেবল জারের পানিতে প্রাণঘাতি জীবাণুর উপস্থিতিই নয়, বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিএসটিআই নির্ধারিত মান না পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এ গবেষণায়।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় শতভাগ বোতলের গায়ে নির্দেশিত উপাদানসমূহের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

ড. মনিরুল বলেন, “ফলাফল বিশ্লেষণে পানির স্বাদ নির্দেশকারী টিডিএসের পরিমাণ সর্বনিম্ন প্রতি লিটারে ৮ মিলিগ্রাম ও সর্বোচ্চ ২৮০ মিলিগ্রাম পাওয়া গেছে। বিডিএস স্ট্যান্ডার্ড অনুয়ায়ী টিডিএসের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।”

পানির মানের ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর এভাবে মনগড়াভাবে বিডিএস মান বসিয়ে দেওয়া ঠেকাতে বিএসটিআইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“না হয় ভোক্তারা এভাবে প্রতারিত হতেই থাকবে। আর ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা এ ধরনের পানি গ্রহণ থেকে দূরে থাকেন,” বলেন এই গবেষক।

সূত্র: bdnews24.com
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:৩৩ পি.এম.

Social Share
Share on facebook
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on twitter

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

Follow Us

বিশুদ্ধ পানির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

কেন বিশুদ্ধ পানি গুরুত্বপূর্ণ? পানির অপর নাম জীবন আমাদের সবার ছোট থেকেই জানা, এটি আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। শুধু তৃষ্ণা মেটানো নয়, পুরো শরীরের প্রতিটি

Read More »

Package Sewage Treatment Plants (PSTP)

A package treatment plant treats wastewater by removing physical, chemical, and biological pollutants by combining physical, chemical, and biological processes. Package sewage treatment plants are

Read More »

Our Recent Post